লালকুটি/ নর্থব্রুক হল
প্রতিষ্ঠাকাল
১৮৭২- ১৮৭৬ সালে নগর মিলনায়তন হিসেবে লালকুটি / নর্থব্রুক হল প্রতিষ্ঠিত হয়।
ঠিকানা ও অবস্থান
বাংলাবাজার থেকে ১০০ গজ এগিয়ে বুড়িগঙ্গার পাড় ঘেশে ফরাশগঞ্জ মহল্লায় ১ নং ফরাশগঞ্জ ঢাকা এই ঠিকানায় লালকুটি/নর্থব্রুক হলটির অবস্থান।
খোলা ও বন্ধের সময়সূচী
নর্থব্রুক হলটি শুধু অনুষ্ঠান, সম্মেলন, সভা ও অন্যান্য কাজে খোলা হয়। এছাড়া প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্তই খোলা থাকে এই হল প্রাঙ্গণ। এছাড়া গ্রস্থাগার ও ব্যায়ামাগার প্রতিদিনই খোলা থাকে।
কর্তৃপক্ষ
নর্থব্রুক হলটি এখন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের অধীনে। ৭৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সির বর্তমানে এটির তত্ত্বাবধায়ক।
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
পূর্ব দিক থেকে একটি গাড়ি বারান্দা দিয়ে প্রবেশযোগ্য। এ ইমারতে প্রবেশ করলেই প্রথমে একটি চতুরস্ত্র হলঘর পড়বে। এর দক্ষিণে কয়েকটি ছোট আকারের কোঠা এবং আধানলাকার ছাদে ঢাকা বারান্দা রয়েছে। হলঘরটির উত্তরের গাড়ি বারান্দা। দক্ষিণের ছোট ছোট কোঠা এবং আধানলাকার ছাদ ধাপে ধাপে উঁচু হয়ে উঠায় ইমারতটিকে বাইরের দিক থেকে দেখতে পিরামিড আদলের মনে হয়। আর সার্বোপরি লালকুঠির মাঝের হলঘরটির উপর রয়েছে মোঘল ধাঁচে তৈরী একটি আদর্শ গম্বুজ। এবং স্থাপনাটির ছাদের প্রতিটি কোনায়ও একটি করে অনুরুপ গম্বুজ রয়েছে। অনুভূমিক কার্নিস ছাদ বড় (Parapet) দিয়ে সজ্জিত। সবকটি গম্বুজের চূড়ায় একটি করে সুচ্যগ্র চূড়াদন্ড রয়েছে। দরজা ও জানালাগুলোর উপরের অংশ ঘোড়ার পদতল আকৃতির খিলান ধারন করছে।
এই খিলানগুলোর কাঠের পাল্লায় ভেনেসীয় ব্লাইন্ড ব্যবহৃত হয়েছে। নর্থব্রুক স্থাপত্যশৈলীতে মোঘল ও ইউরোপীয় প্রথাসিদ্ধতার অপূর্ব সংমিশ্রন ঘটেছে।
লালকুঠি নামকরণ
১৮৭২ সালে নির্মিত এই নর্থব্রুক হলটির ইমারতটি লালরঙ্গে রাঙ্গানো ছিল। এবং পরবর্তীতে এই নর্থব্রুক হলটিকে লালকুঠি নামে ডাকা হতো। তাই এর নাম হল নর্থব্রুক হল বা লালকুটি।
টয়লেট ব্যবস্থা
এখানে একাধিক টয়লেট ব্যবস্থা আছে। এবং টয়লেটগুলো স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিস্কার পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থাও আছে।
গ্রন্থাগার
নর্থব্রুক হল বা লালকুটিতে একটি বহুপুরনো গ্রন্থাগার আছে। প্রতিদিন এই গ্রন্থাগার খোলা থাকে। এইখানে বহু পুরনো মূল্যবান বই আছে। এই গ্রন্থাগারটি লালকুঠির দক্ষিণ-পূর্ব কোনের একটি জরাজীর্ন ভবনে অবস্থিত। এখানে মূল্যবান বই ছাড়াও দৈনিক পত্রিকা রাখা হয়। প্রায় ৮ টি স্বনামধন্য পত্রিকা থাকে। স্থানীয় লোকজন এখানে বেশীর ভাগ সময় বেস পত্রিকা পড়েন। গ্রস্থাগারটিতে সংগৃহীত মূল্যবান বইগুলো ঢাকার নবাব আহসান উল্লাহ সাহেব এবং আরও অনেকেই দিয়েছিলেন এই গ্রন্থাগারটিতে প্রায় ১৫ টি তাক আছে এবং বসে পড়ার জন্য টেবিল ও চেয়ার আছে। গ্রন্থাগারের দুইজন কেয়ারটেকার আছেন।
বর্তমান অবস্থা
নর্থব্রুক হলটি বর্তমানে আগের অবস্থায় নেই। সময়ের প্রয়োজনে এখানে নতুন স্থাপনা গড়ে উঠেছে। গড়ে উঠা নতুন স্থাপনাগুলো হল-
-মঈন উদ্দিন চৌধুরী মেমোরিয়াল হল।
-কমিশনার কার্যালয়।
-স্পোটিং ক্লাব।
-কমিউনিটি সেন্টার।
-ব্যায়ামাগার।
-বিট পুলিশিং অফিস।
-ডায়াবেটিস সমিতি।
-ছোট বড় সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যক্রম।
মঈনউদ্দিন চৌধুরী মেমোরিয়াল হল
১৯৬৭ সালে এই লালকুঠিতে একটি মেমোরিয়াল মঞ্চ নির্মাণ করার জন্য ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। এবং পরবর্তীতে তৎকালীন ঢাকার মেয়র জনাব মোঃ হানিফ এই হলটির পুনঃ নির্মান কাজ শুরু করেন ২৫ শে এপ্রিল ১৯৯৬ ইং সালে। এবং ১৪ ই নভেম্বর ১৯৯৭ ইং এই হলটির উদ্ধোধন করেন। ৩৫০ আসন বিশিষ্ট এ হলটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং অন্যান্য সুবিধা সম্বলিত।
কমিশনার কার্যালয়
এই লালকুঠির মূল প্রবেশপথের ডান পাশের তিনতলা বিশিষ্ট ভবনটির ২য় তলায় ৭৯ নং ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয় রয়েছে। বর্তমানে কমিশনার জনাব হাজী মোঃ সাইদ। তিনিই এই লালকুঠির সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে আছেন।
ফরাশগঞ্জ স্পোটিং ক্লাব
১৯৫৯ ইং সালে কথিত সরদার বাড়িতে ফরাশগঞ্জ ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৬৭ ইং সালে এই ক্লাবটি লালকুঠিতে স্থানান্তরিত করা হয়। এই ক্লাবটির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আলহাজ্ব মাওলা বখস সরদার। লালকুঠিতে এর উদ্ধোধন করেন জনাব মঈনুদ্দিন চৌধুরী। এখানে এই ক্লাবের সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ছাড়াও আরও অন্যান্য কার্যক্রম চলে।
কমিউনিটি সেন্টার
এই নর্থব্রুক হলের ঠিক ডান পাশেই ঢাকা সিটি কর্পোরেশন কমিউনিটি সেন্টার নির্মিত হয়েছে। পূর্বে এটি নগর মিলনায়তন হিসেবে নির্মিত হলেও বর্তমানে এটি একটি কমিউনিটি সেন্টার। প্রায় ২,০০০ লোক স্থান সংকুলান হয় এ সেন্টারটিতে। তৃতীয় তলা পর্যন্ত সেন্টারটি ছিমছাম। যে কোন বিয়ে ও অনুষ্ঠানের জন্য সেন্টারটিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা ৪,৫০০ টাকা এবং সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া পড়বে।
অডিটোরিয়াম
লালকুঠিতে একটি অডিটোরিয়াম আছে। এখানে সভা, সম্মেলন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির আয়োজন করা যায়। প্রায় ৩০০ জন লোক বসার ব্যবস্থা আছে এবং এই অডটোরিয়াম হলটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ভাড়া পড়বে ৪,৫০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা।
ব্যায়ামাগার
লালকুঠির মূল প্রবেশপথের বাঁ দিকে ভবনের নিচতলায় একটি সু-সজ্জিত ব্যায়ামাগার আছে। এখানে প্রতিদিন স্থানীয় এবং অন্যত্র থেকে আসা সকলেই শারিরিক কসরতের জন্য এখানে আসেন। সিটি কর্পোরেশন ব্যায়ামাগারটিতে অনেক সরঞ্জামাদি আছে। সদস্য হওয়ার জন্য ভর্তি হতে হয়। এটি স্থাপিত হয় ২০০১ ইং সালে।
বিট পুলিশিং অফিস
লালাকুঠিতে স্থাপিত কমিশনার কার্যালয়ের নীচতলায় অস্থায়ীভাবে পুলিশিং কার্যক্রমের জন্য বিট পুলিশিং বসানো হয়েছে। সূত্রাপুর থানাধীন ৭৯ নং ওয়ার্ডে ফরাশগঞ্জ বিট পুলিশিং অফিস বসানো হয়েছে।
ডায়াবেটিস সমিতি
লালকুটিতে বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতি ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার নেটওয়ার্ক এর একটি স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। স্থানীয় লোকজন এখান থেকে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহন করে থাকেন।
সামাজিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম
নর্থব্রুক হলের পেছনে তিনটি কক্ষ। স্থানীয় সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ সকল সংগঠনের সাপ্তাহিক প্রশিক্ষণ তথা আনুষ্ঠাষাঙ্গিক কার্যক্রমগুলো আলাদা আলাদা দিনে করে থাকে।
পানির পাম্প
নর্থব্রুক হলের পেছনের দিকে পানির পাম্প আছে। পর্যাপ্তভাবে পানি সরবরাহের জন্য এখানে পাম্প বসানো হয়েছে।
গাড়ি পার্কিং
প্রায় ২৫ টির মত গাড়ি পার্কিং করা যায় এবং এজন্য কোন চার্জ প্রযোজ্য নয়।
নিরাপত্তা ও অগ্নি নির্বাপণ
নিজস্বভাবে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থায় ফায়ার এক্সটিংগুইশিং ও একাধিক ফায়ার এক্সিট ব্যবস্থা রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট পরিমান লোক নিয়োজিত আছেন।
ফোয়ারা
১৯৭১ ইং সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ৭৯ নং ওয়ার্ডের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই নর্থব্রুক হল/ লালকুঠির দুটি প্রবেশদ্বারের মাঝামাঝি একটি সুদৃশ্য তারা আকৃতির ফোয়ারা নির্মান করা হয়েছিল।
রবীন্দ্র স্মৃতিফলক
লালকুঠির মূল ফটকের সামনে একটি রবীন্দ্র স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় একাধিক সংগঠনের আমন্ত্রনে ঢাকা শহরে লালকুঠিতে ঢাকা মিউনিসিপলিটি ও পিপলস এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে তাকে সম্বর্ধনা জানিয়ে মানপত্র পাঠ করা হয়। জবাবে কবি দেশপ্রেম সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিশ্ব শান্তির পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন।
ঢাকার সেরা রেষ্টুরেন্টগুলো
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন